
নিউজ ডেস্ক::
ইয়াবার একমাত্র উৎস মিয়ানমার। সেখান থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে বাংলাদেশে আনা হয় ইয়াবা। এরপর তা ছড়িয়ে দেয়া হয় রাজধানীসহ সারা দেশে। এমনটাই বলা হচ্ছিল এতদিন। তবে এবার দেশের ভেতরেই পাওয়া গেছে ইয়াবা কারখানার সন্ধান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
এই অভিযানের প্রথমদিনে গত বৃহস্পতিবার ইয়াবার কারখানার সন্ধানসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও অস্ত্রসহ ৩৮ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া মাদকাসক্ত ১০ পথশিশুসহ ১৯ ব্যক্তিকে আটক করে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল তেজগাঁওয়ের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে মাদকের আগ্রাসন বেড়েছে। রাতারাতি লাখ লাখ তরুণ-তরুণী মাদকের দিকে ঝুঁকছে। এটা উদ্বেগজনক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আমরা সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছি। এরই প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার হরিপুর গ্রামে এক অভিযানে ইয়াবা তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে ডিএনসির কর্মকর্তারা অভিযান চালালে একটি পলিথিনের জিপারে ২০০ পিস এ্যামফিটামিনযুক্ত ইয়াবা ট্যাবলেট, ২ কেজি ইয়াবা তৈরির উপকরণ পাউডার, ৩০০ গ্রাম কেমিক্যাল, ২০০ গ্রাম তরল পদার্থ, ৩টি ডাইস মেশিন, ২টি সিসি ক্যামেরা, ১টি মনিটর, ১টি ডিভাইস ও ১টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে লাকী আক্তার (৩২) নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মো. হাবিবুর রহমান নামের ওপর এক মাদক ব্যবসায়ী ডিএনসি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে গেছে। তবে তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।
ডিএনসির ডিজি বলেন, ঢাকা মেট্রো গোয়েন্দারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কমলাপুর রেল স্টেশন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চানখারপুর, গেণ্ডারিয়া, টিটিপাড়া, খিলগাঁও, পুরানা পল্টন, ভাটারা, মতিঝিল, আরামবাগ, যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ বনশ্রী, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও রেলওয়ে বস্তি, গুলশান, উত্তরা, বেড়িবাঁধ এবং গাবতলী এলাকা। এসব এলাকায় অভিযানে ৩৫৬৫ পিস ইয়াবা, আড়াই কেজি গাঁজা, ৫ বোতল ফেনসিডিল, ৭ বোতল বিলাতি মদ, ৫ ক্যান বিয়ার, ৮ রাউন্ড গুলিসহ ৭.৬৫ এম.এম. ১টি পিস্তল, ৩টি মোবাইল সেট এবং নগদ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় মোট ৩৮জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় ১৪টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১০ জন মাদকাসক্ত পথ শিশুসহ ১৯ জন মাদকসক্তকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিারময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত মামলার ১৯ জন আসামিরা হলে মো. কামাল (৩০), শরীফ (৩৪), মাজুম খাঁ (২৬), নাঈম মিয়া (২০), মিজানুর রহমান(২৬), মো. রুবেল গাজী লিটন (২৬), মো. কাউচার (১৯), সাঈদ খান (৫২), আনোয়ার হোসেন খোকা (৫৬), মো. সিফাত (২৫), বিল্পব (২৬), মানিক (২১), মো. রায়হান (২১), তামিম হোসেন (২১), মনি রানী বিশ্বাস (৪৪), মফিজ (৩০), জহিুরল ইসলাম (৩২), স্বপন ওরফে মাঝি ন্বপন (৩২) ও মো. সাইফুল ইসলম (৪৫)। গ্রেপ্তারকৃত অধিকাংশ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে মর্মে জানা যায়। অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চল ও ঢাকা গোয়েন্দা কার্যালয়ের ৮০ জন, এপিবিএনের ১১ জন ও ডিএমপির রিজার্ভ পুলিশের ১০ সদস্য অংশগ্রহণ করেন। মহানগরীর মাদক প্রবণ এলাকাসমূহে চলমান এ সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে জামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে দেশের ছোটবড় সব মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা রয়েছে। কিন্তু তাদের কেন গ্রেপ্তার করছে না এমন প্রশ্নে ডিজি বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। প্রথমত, আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় কম লোকবল। আমরা চাইলেই সব কিছু করতে পারি না। তবে লোকবলের জন্য আমাদের একটি চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি পদক্ষেপ নিবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের কাছে ছোট থেকে শুরু করে অনেক গডফাদারের নামের তালিকা আছে। আমরা জানি তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আমরা চাইলেই তাদেরকে আটক করতে পারি না। তখনই তাদেরকে আটক করতে পারবো যখন মাদকদ্রব্যসহ হাতেনাতে পাবো। অপর এক প্রশ্নে ডিজি বলেন, দেশে সত্যিই মাদকের আগ্রাসন বেড়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের তৎপরতাও বেড়েছে। প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পাশাপাশি আসামি গ্রেপ্তার ও অসংখ্য মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা দেশে অবৈধভাবে ইয়াবার কারখানা করছে। এমনকি ইয়াবা তৈরির উপকরণও বিদেশ থেকে আনছে। আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে ইয়াবা তৈরির উপকরণ ল্যাবে পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়েছি। কারণ তারা যেসব উপকরণ দিয়ে ইয়াবা তৈরি করে এগুলো আরো বেশি ক্ষতিকর। এছাড়া যারা এই কাজ করে তাদেরকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তারা জড়িত। তাদের ইয়াবা বিক্রির জন্য আলাদা নেটওয়ার্ক আছে।
পাঠকের মতামত